টিপু হত্যা আসলে শুটার কে?

গত ৯ দিন আগে রাজধানীর শাহজাহানপুরের ব্যস্ততম সড়কে প্রকাশ্যে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। ওই খুনের ঘটনায় সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। টনক নড়ে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ঘটনাস্থলেই জব্দকৃত আলামত উদ্ধার, সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার, ভুক্তভোগীর পরিবারের বক্তব্য এবং প্রথাগত সোর্স এর মাধ্যমে পুলিশ ও র‌্যাব এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

মতিঝিলকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং টেন্ডারের সঙ্গে জড়িত  প্রায় ৭৫ জনকে ডিবি এবং র‌্যাব কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। ঘটনার দুইদিন পর বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেল থেকে মাসুম নামে এক যুবককে ঢাকা মহানগর পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ডিবি জানিয়েছে, মাসুম টিপু হত্যার মূল শুটার। মাসুমের বাড়ি ঢাকার পশ্চিম মাদারটেক এলাকায়।

সরজমিন তার এলাকার লোকজন  জানিয়েছে যে, মাসুম উত্তর গোড়ান এলাকায় ডিশের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং চুক্তিতে পরিবহন ভাড়া নিয়ে মালামাল বহন করে থাকে। পশ্চিম মাদারটেকে এতবড় শুটার বসবাস করে তা শুনে এলাকাবাসী অবাকও হয়েছেন। এছাড়াও মাসুম গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে রহস্যজনক আচরণ করেছেন। ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সে গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই টিপু হত্যার কথা স্বীকার করেছে। অন্যদিকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাব জানিয়েছে, যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী এবং কয়েকজন ঘটনাস্থলে ছিল। তবে ঘটনাস্থলে কে শুটার ছিল তা তারা র‌্যাবকে নিশ্চিত করতে পারেনি। এজন্য র‌্যাব মূল শুটার কে তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। র‌্যাব জানিয়েছে, এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আন্ডারওয়াল্ডের শীর্ষ সস্ত্রাসী জিসান। তাকে সহযোগিতা করেছে এবং কিলার ভাড়া করেছে মূসা। মূসা হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগেই দুবাই পালিয়ে যায়। যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা মাঠে থেকে হত্যাকাণ্ডের মিশন সম্পন্ন করেছে। মূসাকে ধরতে পারলেই ঘটনাস্থলে টিপুকে কে সরাসরি হত্যা করেছে তা জানা যাবে। র‌্যাব জানিয়েছে, এই খুন ক্যাটআউট (তৃতীয় পক্ষ) পদ্ধতিতে করা হয়েছে। মতিঝিল কেন্দ্রিক ব্যবসার ভাগবাটোয়ারা, চাঁদাবাজি, ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ, দোকান দখল, মার্কেট নিয়ন্ত্রণসহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে একাধিক গ্রুপের রেষারেষি চলে আসছিল। এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। র‌্যাব জানিয়েছে, কিলার  মূসাকে দুবাই থেকে দেশে কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তার জন্য কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

এ বিষয়টি জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন  জানান, মূসাকে ধরা গেলেই জানা যাবে  যে সে কাকে শুটার হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার সড়কে খুন হন টিপু। ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ি চালক মুন্নাও। সূত্র জানায়, এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারজানা ইসলাম ডলি শুক্রবার সকালে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আন্ডারওয়াল্ডের সম্পর্ক আছে বলে এটি নিশ্চিত হয়েছে র‌্যাব। গ্রেপ্তার হওয়া শুটার মাসুমের ৭ দিনের রিমাণ্ডের গতকাল ৬ দিন পার হয়েছে। রিমাণ্ড শেষে আরও বেশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে রিমাণ্ড চাওয়া হবে হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে একজন। আর ব্যাকটিমে অন্ত্যত ৬ জন ছিল। মোটরসাইকেল ছিল মোট ২টি। শুটার কিলিং মিশন সম্পন্ন করে একটি মোটরসাইকেলে উঠে কিছুদূর যাওয়ার পর আরেক মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছে।  সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, শুরু থেকে ফিরো নাসির রেকি করছিল। টিপুর গাড়ি যখন দুই রাস্তার মোড় অতিক্রম করছিল তখন তাকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখা যায়।

সূত্র যায়, এ ঘটনায় শুটার মাসুমকে ধরার পর সে আসল শুটার কী-না তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয় গোয়েন্দাদের মধ্যে। পরে র‌্যাব মূল পরিকল্পনাকারী ৪ জনকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যে, কিলিং মিশনে স্পটে দায়িত্বে কে ছিল? তারা এর কোনো উত্তর দিতে পারেনি। অথচ তারাই শাহজাহানপুর এলাকায় টিপু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাসহ স্পটে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে।

সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ডের পর জিসান গ্রুপের শুটার জসিমকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার এখনো হদিশ পাওয়া যায়নি।  সূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ইসলামপুরে মানববন্ধন

» সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদ ও সাংবাদিকদের পেশাগত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন

» সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে মাদারীপুরে মানববন্ধন

» রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ৩৫৫৯ মামলা

» আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে শান্তির রাজনীতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান মঈন খানের

» বড় কিছু নিয়ে ফিরছেন শাকিব খান, দিলেন বার্তা

» ৭১-এর পক্ষে-বিপক্ষের রাজনীতি নতুন প্রজন্ম গ্রহণ করতে রাজি নয়: নাহিদ

» ক্রীড়া বিকেন্দ্রীকরণে যথাযথ অবকাঠামো প্রয়োজন : আসিফ মাহমুদ

» নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব

» আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না: সালাহউদ্দিন

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

টিপু হত্যা আসলে শুটার কে?

গত ৯ দিন আগে রাজধানীর শাহজাহানপুরের ব্যস্ততম সড়কে প্রকাশ্যে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। ওই খুনের ঘটনায় সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। টনক নড়ে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ঘটনাস্থলেই জব্দকৃত আলামত উদ্ধার, সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার, ভুক্তভোগীর পরিবারের বক্তব্য এবং প্রথাগত সোর্স এর মাধ্যমে পুলিশ ও র‌্যাব এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

মতিঝিলকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং টেন্ডারের সঙ্গে জড়িত  প্রায় ৭৫ জনকে ডিবি এবং র‌্যাব কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। ঘটনার দুইদিন পর বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেল থেকে মাসুম নামে এক যুবককে ঢাকা মহানগর পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ডিবি জানিয়েছে, মাসুম টিপু হত্যার মূল শুটার। মাসুমের বাড়ি ঢাকার পশ্চিম মাদারটেক এলাকায়।

সরজমিন তার এলাকার লোকজন  জানিয়েছে যে, মাসুম উত্তর গোড়ান এলাকায় ডিশের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং চুক্তিতে পরিবহন ভাড়া নিয়ে মালামাল বহন করে থাকে। পশ্চিম মাদারটেকে এতবড় শুটার বসবাস করে তা শুনে এলাকাবাসী অবাকও হয়েছেন। এছাড়াও মাসুম গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে রহস্যজনক আচরণ করেছেন। ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সে গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই টিপু হত্যার কথা স্বীকার করেছে। অন্যদিকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাব জানিয়েছে, যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী এবং কয়েকজন ঘটনাস্থলে ছিল। তবে ঘটনাস্থলে কে শুটার ছিল তা তারা র‌্যাবকে নিশ্চিত করতে পারেনি। এজন্য র‌্যাব মূল শুটার কে তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। র‌্যাব জানিয়েছে, এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আন্ডারওয়াল্ডের শীর্ষ সস্ত্রাসী জিসান। তাকে সহযোগিতা করেছে এবং কিলার ভাড়া করেছে মূসা। মূসা হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগেই দুবাই পালিয়ে যায়। যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা মাঠে থেকে হত্যাকাণ্ডের মিশন সম্পন্ন করেছে। মূসাকে ধরতে পারলেই ঘটনাস্থলে টিপুকে কে সরাসরি হত্যা করেছে তা জানা যাবে। র‌্যাব জানিয়েছে, এই খুন ক্যাটআউট (তৃতীয় পক্ষ) পদ্ধতিতে করা হয়েছে। মতিঝিল কেন্দ্রিক ব্যবসার ভাগবাটোয়ারা, চাঁদাবাজি, ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ, দোকান দখল, মার্কেট নিয়ন্ত্রণসহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে একাধিক গ্রুপের রেষারেষি চলে আসছিল। এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। র‌্যাব জানিয়েছে, কিলার  মূসাকে দুবাই থেকে দেশে কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তার জন্য কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

এ বিষয়টি জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন  জানান, মূসাকে ধরা গেলেই জানা যাবে  যে সে কাকে শুটার হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার সড়কে খুন হন টিপু। ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ি চালক মুন্নাও। সূত্র জানায়, এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারজানা ইসলাম ডলি শুক্রবার সকালে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আন্ডারওয়াল্ডের সম্পর্ক আছে বলে এটি নিশ্চিত হয়েছে র‌্যাব। গ্রেপ্তার হওয়া শুটার মাসুমের ৭ দিনের রিমাণ্ডের গতকাল ৬ দিন পার হয়েছে। রিমাণ্ড শেষে আরও বেশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে রিমাণ্ড চাওয়া হবে হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে একজন। আর ব্যাকটিমে অন্ত্যত ৬ জন ছিল। মোটরসাইকেল ছিল মোট ২টি। শুটার কিলিং মিশন সম্পন্ন করে একটি মোটরসাইকেলে উঠে কিছুদূর যাওয়ার পর আরেক মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছে।  সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, শুরু থেকে ফিরো নাসির রেকি করছিল। টিপুর গাড়ি যখন দুই রাস্তার মোড় অতিক্রম করছিল তখন তাকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখা যায়।

সূত্র যায়, এ ঘটনায় শুটার মাসুমকে ধরার পর সে আসল শুটার কী-না তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয় গোয়েন্দাদের মধ্যে। পরে র‌্যাব মূল পরিকল্পনাকারী ৪ জনকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যে, কিলিং মিশনে স্পটে দায়িত্বে কে ছিল? তারা এর কোনো উত্তর দিতে পারেনি। অথচ তারাই শাহজাহানপুর এলাকায় টিপু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাসহ স্পটে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে।

সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ডের পর জিসান গ্রুপের শুটার জসিমকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার এখনো হদিশ পাওয়া যায়নি।  সূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com